কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন

কালোজিরা এমন একটি উপাদান যা মানুষ এখন পর্যন্ত ওই কালোজিরা সম্পর্কে তেমন জানে না। কিন্তু আমি আপনাকে এই চ্যাপ্টারে কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করব। এই কালোজিরা এক ধরনের ফুল হয় তারপরে ফুল থেকে ফল হয় যা একটি গাছে একবারই হয়। সাধারণত একটি ফলে ২২ থেকে ২৬ টা পর্যন্ত বীজ থাকে অর্থাৎ কালোজিরা থাকে।
কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
এই চ্যাপ্টারের আপনি আরো জানতে পারবেন কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম, কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা, কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা ইত্যাদি। এবং আরো জানতে পারবেন কালোজিরা সাত দিন খেলে কি হয় আর এর ক্ষতিকর দিকটিই বা কি।

কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম

এখানে আপনি এই কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে পারবেন। সুতরাং এই চ্যাপ্টারটা অবশ্যই মনোযোগ সহকারে পড়বেন। আসলে অনেকেই জানে না যে কালোজিরা কিভাবে খেতে হয়। এটা ভিজিয়ে খেতে হয় না শুকনো খেতে হয় দুধ দিয়ে খেলে ভালো হয় না এমনি চিবিয়ে খেলে ভালো হয় সে বিষয়টা আগে ক্লিয়ার হতে হবে।

আপনার যদি পেটের সমস্যা থাকে তাহলে রাতে এক গ্লাস পানিতে কালোজিরা ভিজিয়ে রাখবেন এবং সকালে কিছু পরিমাণ দুধের সাথে বা চিনি দিয়ে মিশিয়ে খেয়ে নিবেন তাহলে পেটের সমস্যা দূর হয়ে যাবে। আপনি হয়তো খেয়াল করে দেখবেন কালোজিরা সাধারণত ভাজাটাই বেশি ব্যবহার করা হয় বিশেষ করে খাবারের পরে রুচি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে।

কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

এখানে আপনি কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে এক ধরনের বিশেষ জ্ঞান অর্জন করতে পারেন তাহলে চলুন জেনে নেই যে কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কি। প্রথমেই বলি কালোজিরাতে প্রচুর পরিমাণের ভিটামিন এবং প্রোটিন থাকে যার ফলে শরীরের বিভিন্ন অসুখের মহা ওষুধ হিসেবে এটি কাজ করে।

এটি সব ধরনের শরীরের জন্য সহনীয় হওয়ার কারণে যেকোনো সময় যেকোনো ভাবে এটি খাওয়া যায়। আর এটি হজমের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। চলুন আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য বা কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে আসি।

  • যে সকল ব্যক্তির চর্মরোগ রয়েছে কালোজিরা সেই চর্মরোগের অবসান ঘটাতে পারে।
  • যাদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা রয়েছে তারা কালোজিরা সেবনের ফলে স্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনতে পারে।
  • এবং যাদের লিভারের সমস্যা রয়েছে কালোজিরা নিয়মিত খেলে লিভার সুরক্ষা থাকবে অল টাইম।
  • এবং দেহের উন্নতির জন্য এতে থাকা ব্যাকটেরিয়া ছত্রাক অথবা বিভিন্ন ভাইরাস প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।
  • এবং যাদের টিউমার রয়েছে তারা মুক্তি পেতে পারে কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার মাধ্যমে।
  • যারা ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত তাদের জন্য কালোজিরা ভূমিকা অপরিসীম।

যাদের চুল পড়ার সমস্যা রয়েছে এবং শান্তিপূর্ণভাবে নিদ্রায় যেতে পারে না, তাদের জন্য সমাধান কালোজিরা। অর্থাৎ কালোজিরা নিয়মিত চিবিয়ে অথবা মধু দিয়ে খেলে এই সকল সমস্যার সমাধান হবে। এবং আরো রয়েছে যাদের মাথাব্যথা করে এবং সর্দি-কাশি রয়েছে অথবা বাতের ব্যথা রয়েছে এবং বিভিন্ন প্রকারের রীদরোগ বা হার্টের সমস্যা অথবা ব্লাড প্রেসার রোগী যারা রয়েছে কিংবা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সুখবর হলো কালোজিরা খাওয়া।

  • এবং আরো রয়েছে উপকারিতা যেমন কালোজিরা খেলে যৌন শক্তি বৃদ্ধি হয়।
  • এবং যেসব মেয়েদের অনিয়মিত মাসিক এর সমস্যা রয়েছে সেগুলো সমাধান হয়।

কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা

আপনি হয়তো জেনে থাকবেন কালোজিরা এমন একটি ভেষজ উপাদান যা সারা পৃথিবীতে স্বাস্থ্য সুরক্ষার কাজের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা যেমন রয়েছে তেমনি কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা ও রয়েছে চলুন সেই বিষয়ে একটু জেনে আসি।

  • কালোজিরাতে প্রচুর পরিমাণে ভাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যার ফলে এটি হজম শক্তির কাজে আসে বা বেশি ফলাফল পাওয়া যায়।
  • কালোজিরা তে এমন একটি উপাদান থাকে যার নাম টাইমোকুইনন আর এটি কোলেস্টরেল কমানোর জন্য খুবই ভালো কাজ করে।
  • কালোজিরা শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে কারণ এটাতে এন্টি ডায়াবেটিক নামক শক্তি রয়েছে। সে কারণে কালোজিরা খাওয়া খুবই দরকারী একটা ব্যাপার।
  • কালোজিরা তে প্রচুর পরিমাণে এন্টি অ্যালার্জিক উপাদান রয়েছে যার ফলে এলার্জিজনিত সমস্যাগুলি বা উপসর্গ যা আছে তা কমানোর জন্য ভালো কাজ করে।
  • কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার আগে অবশ্যই এই কয়েকটা বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। তা হলো
  • কালোজিরা ভালো করে ভাবে ধুয়ে নিতে হবে
  • এর স্বাদ অনেকটা ঝাঁঝালো হতে পারে তা নিয়ে একদম টেনশন করার দরকার নেই।
  • কালোজিরা আর পুষ্টিগুণ খুবই দ্রুত কাজ করে
  • কালোজিরা খাওয়ার আগে অর্থাৎ চিবিয়ে খাওয়ার আগে অবশ্যই আপনাকে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে এই কালোজিরা চিবিয়ে না খেয়ে যদি কোন খাবারের পর মসলা হিসেবে পরিবেশন করা যায় তাহলে মানুষ আরো খুশি হবে বা পরিবারের সবার ভালো লাগবে।

সকালে খালি পেটে কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা

সকালে খালি পেটে কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই অনেক কিছুই জানেন আজকে এই বিষয়ে ভালোভাবে জেনে নিন। সকালে কালোজিরা খেলে একটি গবেষণায় পাওয়া গেছে এটি হজম শক্তিতে বা হজমের কাজে অনেক সাহায্য করে। আর যদি আপনার গ্যাস্ট্রিকের প্রবলেম থেকে থাকে তাহলে এটিও সারাতে সাহায্য করে।

এই কালোজিরা নিয়মিত সকালবেলা একদম শূন্য পেতে খেতে হবে পানির সাথে ভিজিয়ে রেখে। অথবা একটু মধুর সাথে মিশিয়ে অল্প পরিমাণে খেতে হবে। এটি চায়ের সাথেও খাওয়া যায় এবং বিভিন্ন তরকারিতেও ব্যবহার করা যায় কালোজিরা। যা তরকারির সাদ্ব কে আরো বাড়িয়ে দেয়।

আপনি অবশ্যই জেনে থাকবেন কালোজিরা একটি ভালো গুণসম্পন্ন ঔষধি উদ্ভিদ। এটি আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কে বাড়িয়ে দেয়। শরীরে থাকা অনেক জীবাণুকে ধ্বংস করে মুক্ত বা সার্বিকভাবে সুস্থ করে তোলে। আর কালোজিরা সাথে হালকা মধু মিশিয়ে খেলে আরো ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

প্রতিদিন কতটুকু কালোজিরা খাওয়া উচিত

আপনি এখন জানতে চান প্রতিদিন কতটুকু কালোজিরা খাওয়া উচিত এই বিষয়ে। তাহলে শুনুন কালোজিরা একটি ঔষধি উদ্ভিদ হওয়ার কারণে এর ভিতরে কোলেস্টরেল নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রয়েছে এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি করার ক্ষমতা রয়েছে। এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতেও সাহায্য করে এই কালোজিরা। এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে থাকে নিয়মিত কালোজিরা খাওয়ার ফলে।

কালোজিরা খাবার জন্য নির্দিষ্ট কোন পরিমাণ কেউই বলতে পারেনি এই পর্যন্ত। আর এটি খাওয়ার জন্য বয়স বা স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে। সুতরাং আপনার শরীরের তাপমাত্রা বা আপনি এই কালোজিরার যে পুষ্টিগুণ বা ক্যালোরি আছে তা গ্রহণ করতে পারবেন কিনা তার উপর ডিপেন্ড করে।

ইসলামে রয়েছে কালোজিরা এমন একটি ঔষধি গুনসম্পন্ন উদ্ভিদ যা একজন মানুষের মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের মহা ওষুধ নামে পরিচিত। আর এই কালোজিরা খাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কোন টাইম বের করতে হবে না । আপনার যখন মন চাইবে তখনই এটি খেতে পারবেন তবে খাওয়ার পরিমাণটা সব সময়ই দুই থেকে তিন চিমটি পরিমাণ অথবা ২ চামচ পরিমাণ হলে ভালো হয়।

টানা ৭ দিন কালোজিরা খেলে কি হয়

আপনি হয়তো বা অবাক হয়ে যাবেন টানা সাত দিন কালোজিরা খেলে কি হয় তা যদি জানতে পারেন। চলুন তাহলে জেনে নিন টানা ৭ দিন কালোজিরা খেলে কি হয় এই বিষয়ে। যেহেতু কালোজিরাতে অনেক প্রোটিন রয়েছে তাই এটি শরীরের টিস্যু তৈরি করে এবং তা মেরামতে সাহায্য করে থাকে।

কালোজিরাতে আরো উপাদান রয়েছে যেটি স্বাস্থ্যকে ঠিক রাখে বা হার্ট কে সুস্থ রাখে তাহলে ওমেগা ও ফ্যাটি এসিড। এবং কালোজিরাতে ফাইবারের পরিমাণ অনেক বেশি থাকার কারণে এটি হজম শক্তিতে কাজ করে আর রক্তের শর্করার মাত্রা ঠিক রাখে। এছাড়াও কালোজিরাতে ভিটামিন এ ভিটামিন বি থাইমিন, ভিটামিন বি টু, এবং আরো রয়েছে নিয়াসিন নামক গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন।

প্রতিদিন কালোজিরা খেলে কি ক্ষতি হয়

আপনি ইতিমধ্যে অবশ্যই হয়তো জেনে ফেলেছেন যে কালোজিরার কি গুণ বা খেলে কি হয় বা কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। কালোজিরাতে যে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি এবং কালোজিরাতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে সে কারণে প্রতিদিন কালোজিরা খেলে অনেক উপকার রয়েছে। কালোজিরাতে খনিজের পরিমাণ আয়রনের পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম এর পরিমাণ  প্রচুর পরিমাণে রয়েছে।

কালোজিরাতে এইসব উপাদান থাকার কারণে মানুষের কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ দূর হয় এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট নামক বায়ো একটিভ থাকার কারণে শরীরের বিভিন্ন ক্ষতিকর কোষ বা টিস্যু রিমুভ করতে সাহায্য করে। আর এই থাইমোকুইনন থাকার কারণে সম্ভাব্য যেসব রোগী ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সেগুলো প্রতিরোধ হতে পারে।

তাই আমি মনে করি নিয়মিত বা প্রতিদিন কালোজিরা খেলে ক্ষতি নয় বরং অনেক উপকার রয়েছে। তাই আপনারা নিয়মমাফিক দিনে অল্প পরিমাণ দু এক চিমটি প্রতিদিন কালোজিরা খাবেন।

কালোজিরার ক্ষতিকর দিক

কালোজিরা আর ক্ষতিকর দিক বলতে কিছু অসুবিধার কথা বলা হয়েছে। তবে একটি কথা যে কালোজিরার যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি রয়েছে অপকারিতাও। বলতে গেলে কালোজিরা খেলে একটা সমস্যা হয় যে যাদের অ্যালার্জি রয়েছে তাদের এলার্জির সমস্যা হয়। এবং চুলকানি থাকলে তা জেগে ওঠে অনেকের শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয় ইত্যাদি।

আবার উপকার আছে বলে আপনি যদি কালোজিরার পরিমাণ বেশি খেয়ে ফেলেন তাহলে হজমের ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং সেই কারণে বুমি বমি ভাব হতে পারে এবং মাথাব্যথা হতে পারে। সেই কারণে নির্দিষ্ট পরিমাণ খাওয়ায় উত্তম। এবং যেসব নারীরা গর্ভবতী তারা যদি বেশি পরিমাণ কালোজিরা খেয়ে ফেলে তাহলে তাদের গর্ভপাত এর সম্ভাবনা রয়েছে।

লেখকের মন্তব্য

পুরো পুষ্টি যদি পড়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই বুঝতে পেরেছেন কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। কালোজিরাতে কি পরিমান ফাইবার আর কি পরিমান খনিজ পদার্থ বা শর্করা রয়েছে তা আপনি এই পোস্টটি পড়ে কিছুটা হলেও জানতে পেরেছেন।

কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার নিকটস্থ বা আত্মীয়-পরিজনদের সাথে এই পোস্টটি শেয়ার করবেন। যাতে তারাও এই সুন্দর পোস্টটি পড়ে অনেক কিছুই জানতে পারে কালোজিরা খাওয়ার ব্যাপারে।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

লেকচার বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url